বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
বরিশাল রিপোর্ট: পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সাংসদ জাহিদ ফারুক শামীম-এমপি বলেছেন, আজকে আমরা যে পর্যায়ে এসেছি, এটা শুরু করেছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি জীবনের ১৪ টা বছর কারাগারের অভ্যন্তরে ছিলেন, তিনি জীবনের যৌবনকালটাই কারাগারের ভেতরে কাটিয়েছেন।তার এই ত্যাগ তিতিক্ষা’র জন্যই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের মানচিত্রে একটা গর্বিত দেশ হিসেবে স্থান লাভ করেছে। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নে আজ আমরা তারই সুযোগ্য কণ্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছি।
শনিবার (২৭ মার্চ) সকালে নগরের জিলা স্কুল প্রঙ্গানে আয়োজিত “স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীঃ সল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ”উদযাপন উপলক্ষে উন্নয়ন মেলার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ বিগত ১০ বছরে যে অগ্রগতি সাধন করেছে, তাতে আজ বংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নেই, দেশ আজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধশালী দেশের লক্ষ্যে। বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য হলো ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধশালী দেশে আমরা পৌছাবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্য স্থির করেছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা ৪১ সালের আগেই সমৃদ্ধশালী দেশে পৌছাতে পারবো।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিগত ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছি। এ সময়ের আমাদের দক্ষিন এশিয়া ও এশিয়ার পাচ পাচটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধানরা আমাদের দেশে এসেছেন এবং তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংহতি প্রকাশ মানেই হলো বাংলাদেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এটা আমাদের দেশের জন্য বিশাল সন্মানের বিষয়। এছাড়া বিগত কয়েকদিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা ভিডিও ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যারমধ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তুর্কির প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। এতে বোঝা যায় বাংলাদেশের অবস্থান আজ পৃথিবীর বুকে কোথায় চলে গিয়েছে। আমরা এখন আর তলাবিহীন ঝুড়িতে নাই। আমরা এখন সমৃদ্ধশালী দেশের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। যারজন্য বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আগামী ৪১ সালের মধ্যে আমরাও সমৃদ্ধশালী হবো এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটা উজ্জল ভূমিকা থাকবে।
জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, আমাদের গর্ব করা উচিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখহাসিনার মতো একজন রাষ্ট্রনায়ক পেয়েছি। যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের শেখরে পৌছে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছেন, তার কন্যা সেটা কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্য স্থির করেছেন আমাদের সকলের দায়িত্ব সে লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আমাদের সহযোগীতার হাত প্রসারিত করতে হবে। সকলে মিলেমিশে আজকে আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বিরোধীদলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের সময় আপনারা দেখেছেন এ দেশে কি উন্নয়ন হয়েছে। কোন উন্নয়ন হয়নি।এদেশে যতো উন্নয়ন হয়েছে বিগত ১০-১২ বছরে হয়েছে। বাংলাদেশ আজ মাথা উচু করে দাড়িয়েছে এই সরকারের সময়ে।বিগত সরকারগুলোর সময় বাংলাদেশের কোন ঠিকানাই ছিলো না।আমাদের কেউ চিনলেও অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকাতো। কিন্তু এখন আর সেই দিন নাই।
তিনি বিরোধীদলের শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের অনেক স্বচ্ছ সদস্য রয়েছেন যারা আমার মন্ত্রনালয়ে আসেন তাদের এলাকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এবং তারা অকপটে বিশ্বাস করে এবং স্বীকার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময় যেভাবে দেশ এগিয়ে গিয়েছে, অতীতে কোন সরকারের সময় এভাবে এগিয়ে যায়নি। তাহলে আর সন্দেহ কোথায় আসুন আমরা সবাই একসাথে কাজ করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্য, সে লক্ষ্যে পৌছাতে আমরা একসাথে কাজ করে যাই। রাজনীতিতে ছোটখাটো খোটা-খুটি থাকে। অন্যান্য জায়গার থেকে বরিশালে আমরা অনেক শান্ত এবং শান্তিতে আছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্যে পৌছাতে হলে আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্যর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, নিয়মাবর্তিতা হতে হবে, ডিসিপ্লিন হতে হবে। দেশ বা জাতিকে সমৃদ্ধশালী হতে হলে, তাকে ডিসিপ্লিন দেশ হতে হবে। এর মানে হলো সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আমাদের মধ্যে অযথা ভূল বোঝাবুঝি, ঝগড়া-ঝাটি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মকে ভালো শিক্ষা দিতে হবে।
তিনি বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, বরিশালে অগ্রগতি তেমন একটা হয়নি। আমার কাছে কষ্ট লাগে, যেখানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে বরিশাল কেন এগিয়ে যায়না। বরিশাল অবশ্যই এগিয়ে যাবে। এরআগে বরিশালের উন্নয়নের একটা প্রকল্প স্থানীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিলো, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সেটা আমি জানতাম না। আমি যদি জানতাম অবশ্যই সেই প্রকল্পটা পাশ হতো। আমি মেয়র সাহেবের সাথে কথা বলে ফেরত আসা প্রকল্পটি দেখে প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে পাশ করানোর চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, গত বন্যায় বরিশাল শহরেও জলাবদ্ধতা হয়েছে। এর অনেক কারণ রয়েছে যেটা মেয়রও বলেছেন। আগে বিএনপির সময় খালগুলো বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে, অনেকে খালের তীরে ঘরবাড়ি উঠিয়েছে। আমি গত বণ্যায় জলাবদ্ধতা দেখে বলেছিলাম ৪ টি খালের প্রকল্প হাতে নেবো এবং এবার বর্ষা আসার আগে কাজ শুরু করার চেষ্টা করবো। একনেকে গেলে প্রকল্প পাশ করতে সময় লাগে, তাই মন্ত্রী পর্যন্ত যেভাবে গেলে পাশ করা যায় সেভাবে করে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদের প্রকল্প বানাতে বলেছি। এতে সহসা প্রকল্প পাশ হয়ে যাবে। আমরা আশা রাখতে পারি বর্ষা আসার আগেই খাল খননের কাজগুলো শুরু হবে।
এসময় তিনি সিটি মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি খালের ওপর প্রকল্প নিয়ে আসলে খালের ওপর অবৈধ দখলদারদের সেটা সরানোর দায়িত্ব কিন্তু আপনার। আমরা সকলে মিলেমিলে বরিশালকে সুন্দর শহর বানাতে চাই। আজ আমি এখানে দাড়িয়ে আছি কিন্তু কাল কোথায় থাকবো সেটা জানিনা। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি মারা গেলে পরে সাড়ে ৩ হাত মাটির ভেতরে ঘুমাতে হবে। মন্ত্রী হন আর যেই হন সাড়ে ৩ হাত কবরের জায়গা সাড়ে ৫ হাত হবে না।
তিনি বলেন, আমি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পরে, এ পর্যন্ত আমাদের ১২৩ টা প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমি যতগুলো প্রকল্প একনেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছি, কোন প্রশ্ন ছাড়াই প্রকল্পগুলো পাশ হয়েছে। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়বাত এই বরিশালের সন্তান, যারমতো একটি ভদ্রলোক খুব কম ছিলো। তিনিও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়সহ আরো তিনটা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি বলেন, মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর বিগত ২ বছর আমি কাজ করছি, দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াই। আমার হাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু বরিশালের ছেলে হিসেবে আমি জোড় গলায় বলতে পারি, কেউ বলতে পারবে না আমি ওখান থেকে একটা টাকাও নিয়েছি। সুতরাং আমারা সততার ব্যাপারে আমি জানি আমি কি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়ণ হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কারণেই আমরা দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছি। আজ পায়রা বন্দর, পদ্মা সেতু হচ্ছে, পায়রা বন্দর পর্যন্ত ফোরলেনের সড়ক , রেললাইন হচ্ছে। এগুলো হলে পরে দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়ন হবে। বিভাগীয় শহর হিসেবে বরিশালের উন্নয়ন হবে। বরিশালে যদি আমরা শিল্প কারখানা করতে না পারি, তাহলে নতুন প্রজন্ম চাকুরি পাবে না। আমাদের শিল্প উন্নয়ন করতে হবে। চেষ্টা চলছে ভোলার গ্যাস বরিশালে আনার জন্য। গ্যাস আসলে আমাদের এখানে শিল্প-কারখানা হবে সেখানে নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থান হবে। নতুন প্রজন্মের প্রতি আহবান থাকবে রাজনীতি করলেও লেখাপড়া করতে হবে, নিজেদেরকে যোগ্য হিসেবে প্রস্তুত করতে হবে। নাহলে আমিসহ কোন মন্ত্রী চাকুরি দিতে পারবে না।
প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের। স্মরন করেন শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়বাত ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের। স্মরণ করেন জাতীয় চার-নেতা, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ সম্ভ্রম হারানো মা-বোন এবং গণতন্ত্রের লক্ষে আওয়ামীলীগের যে নেতা কর্মীরা জীবন বিষর্যন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন তাদের সকলকে।
বরিশারের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান-বিপিএম (বার), জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মনোয়ার হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত প্রমুখ।
আলোচনা সভার পূর্বে “স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীঃ সল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ”উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত র্যালিতে অংশগ্রহন করেন অতিথিরা। এরআগে তারা বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। আলোচনাসভা শেষে উন্নয়ন মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রীসহ অতিথিবৃন্দ।